জাতীয় ঐক্যের আহ্বান মির্জা ফখরুলের
বিরাজমান পরিস্থিতির অবসান ঘটিয়ে দেশকে উন্নয়নের ধারায় নিতে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ সোমবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এ আহ্বান জানান।
দৈনিক ‘আমার দেশ’ বন্ধ এবং এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের গ্রেপ্তারের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
বিএনপির মহাসচিব বলেছেন, ‘দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ১৯৭২ থেকে ৭৫ পরিস্থিতির চেয়েও ভয়াবহ। মানুষ এ অবস্থার অবসান চায়। শিগগির স্বৈরাচারী শাসনের অবসান হবে।’ বিএনপির সাড়ে চার লাখ নেতাকর্মীকে আসামি করে ৭০ হাজার মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব।
বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘১৯৭২ থেকে ৭৫ সাল পর্যন্ত মানুষের মৌলিক অধিকার ও গণতন্ত্র ছিল না। ৭৫ সালে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে একদলীয় স্বৈরাচারী বাকশাল সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। পাশাপাশি বাক স্বাধীনতা হরণ করে সব পত্রিকা বন্ধ করে ক্ষমতাসীনদের স্তূতি করার জন্য সরকারের নিয়ন্ত্রণে মাত্র চারটি পত্রিকা খোলা রাখা হয়েছিল। বর্তমান সরকারও একই পথে হাটছে। আমি নিশ্চিত দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবেই।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ড. জাফরুল্লাহ খান, সাবেক সচিব আ ন হ আখতার হোসেন, অধ্যাপক ইউসুফ হায়দার, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক রুহুল আমিন গাজী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী এবং শিক্ষক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া।
‘আমার দেশ’ পত্রিকা খুলে দিয়ে অবিলম্বে মাহমুদুর রহমানকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মজ্জাগত অভ্যাস হলো- এরা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও ভিন্নমত সহ্য করতে পারে না। ৭৫ পূর্ববর্তী সময়েও এরা রক্ষীবাহিনী বাবাকে দিয়ে ছেলের মাথা কেটে সেই মাথা দিয়ে ফুটবল খেলেছে। কমিউনিস্ট আন্দোলনের নেতা অরুণ সেনকে নির্যাতনের কথা মনে হলে গা শিউরে উঠে। বাকশাল সরকারের মতো বর্তমান সময়েও সরকার তার বিভিন্ন বাহিনী দিয়ে আমাদের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। ইলিয়াছ আলীসহ তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে গুম করেছে। আমাদের নেতাকর্মীদের নামে ৭৪ হাজার মামলা দিয়েছে। এতে আসামি করা হয়েছে সাড়ে চার লাখের বেশি নেতাকর্মীকে। এই অবস্থায়ও আমি আশাবাদী, শিগগিরই এই দুঃশাসনের অবসান হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক এমাজউদ্দিন বলেন, শেখ হাসিনার হাতে গণতন্ত্র নিহত হয়েছে। সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে লণ্ডভণ্ড করে ফেলেছে সরকার। আইনের শাসন ও সুবিচার বলতে কিছুই আর বাকি নেই। অন্যায়ের শিকার মানুষ সামান্যতম প্রতিবাদ করারও সুযোগ পাচ্ছে না। কথা বললেই গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। বাঁশখালীর ঘটনায় তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আমরা এ কেমন সমাজে বাস করছি? মানুষ তার পছন্দ-অপছন্দের কথাও বলতে পারছে না। মানুষ এ অবস্থার অবসান চায়।’
ড. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘ইতিহাস বলে- স্বৈরাচার কোনো দেশেই বেশিদিন স্থায়ী হয় না। আমাদের দেশেও হবে না। আপনারা নিশ্চিত থাকেন। অতীতের স্বৈরচারদের মতোই এ সরকারকে করুণভাবে বিদায় নিতে হবে। জনগণ সেই অপেক্ষায়ই রয়েছে।’